কর্মসূচীর ব্যাখা – পঞ্চম দফা কর্মসূচী

কর্মসূচীর ব্যাখা – পঞ্চম দফা কর্মসূচী

“শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এবং ছাত্রসমস্যা দূরীকরণের ব্যবস্থা করা।” – এ কর্মসূচীরও দু’টো দিক রয়েছে।

(১) শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার।
(২) ছাত্ৰসমস্যার সমাধান

(★) শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার

সুশিক্ষা হলো এ সংগঠনের পঞ্চম মূলনীতি এবং সুশিক্ষা অর্জন ও আদর্শ চরিত্রে চরিত্রবান হবার কর্তব্যবোধ জাগ্রত করা হল আমাদের দ্বিতীয় কর্মসূচী। আমাদের মূলনীতি ও দ্বিতীয় কর্মসূচীর আবেদনের সাথে বর্তমান প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার রয়েছে চরম বৈরিতা। দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা মূলতঃ পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রতিফলন যা কোন ক্রমেই এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের সভ্যতা সংস্কৃতির পরিপূরক নয় । বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী মূল্যবোধের আবেদন যেমন নেই, তেমনি নেই দেশ প্ৰেমিক আদর্শ চরিত্রের সুনাগরিক গড়ার কোন ব্যবস্থা। বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে যে সন্ত্রাস, দেশব্যাপী যে নৈরাজ্য, চরিত্রহীনতা মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে এর মোকাবিলায় বর্তমান
শিক্ষা ব্যবস্থা একটি অসাড় অচল ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত। তাছাড়া যে শিক্ষার সাথে আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশনার কোন সম্পর্ক নেই সেটা মানব কল্যাণে অবশ্যই ব্যর্থ হবে। স্রষ্টা নির্দেশিত পথ ও শিক্ষাই তাঁর সৃষ্টির জন্য বিকল্পহীন পাথেয়। অন্য কোন ব্যবস্থা অবশ্যই নয়। আর প্রিয় নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাধ্যমেই আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি জগতকে তাঁর সে নির্ধারিত শিক্ষার সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ স্বয়ং ঘোষণা করেছেন –

ﻛَﻤَﺎ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻓِﻴﻜُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻜُﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻜُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ
ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ‏(سورة البقرة-۱۵۱)

“যেমন আমি তোমাদের প্রতি তোমাদের মধ্য হতে একজন রাসুল পাঠিয়েছি। যাতে তিনি তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনান। তোমাদের চারিত্রিক পরিশুদ্ধি করেন। তোমাদেরকে আমার কিতাব ও হিকমতের জ্ঞান শিক্ষাদেন এবং সে সব বিষয় জ্ঞাত করান, যা ছিল তোমাদের অজ্ঞাত।” (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫১)

هو ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻌَﺚَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄُﻣِّﻴِّﻴﻦَ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﻣِّﻨْﻬُﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻟَﻔِﻲ ﺿَﻠَﺎﻝٍ ﻣُّﺒِﻴﻦٍ(سورة الجمعة-۲)

“নিশ্চয় তিনি মহান প্রভু যিনি উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন স্বয়ং তাদের মধ্য হতে। তিনি তাদেরকে আল্লাহর আয়াত শুনান, তাদের জীবন পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত বিজ্ঞান) শিক্ষা দেন।” (সূরা আল-জুম’আ; আয়াতঃ ০২)

উপরোক্ত আয়াতে করীমা দু’টো সকল উম্মতে মুহাম্মদীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শন যে জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সংগঠিত করার জন্য মানুষের ইহকালীন সৌন্দর্য সাধন ও পরকালীন নাজাতের জন্য একমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থা রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা তথা কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এর বিকল্প কোন ব্যবস্থা আমাদের জন্য হিতকর নয়। আর এ অমীয় বাণী ভুলে গিয়ে আমরা পাশ্চাত্য মানবগড়া শিক্ষা আদর্শকে গ্রহণ করেছি। যার পরিণতির শিকার আজ কোটি কোটি মুসলমান; ছাত্ৰ সমাজ। এর অশুভ প্রভাব একটি সম্ভাবনাময় জাতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে দূর বহুদূরে। অথচ ইসলাম কোরআন-সুন্নাহ ভিন্ন অন্য সব জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ সকল প্রকার জ্ঞানের সন্ধানে আত্মনিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে, ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনে যাও’ (আল হাদীস)। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ নির্দেশ কি ইসলামের প্রগতিশীল মনোভাবের প্রতিফলন নয়??

জ্ঞান অর্জন শুধু পুরুষের জন্য নয়, স্ত্রী জাতির জন্যও অত্যাবশক বলা হয়েছে।

طلب العلم فریضة علی کل مسلم ومسلمة(ابن ماجه)

“জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ।” (ইবনে মাজাহ)।

সুতরাং মহিলাদের নিজস্ব পরিবেশে থেকে জ্ঞান অর্জন অবশ্য করণীয় একটি কাজ। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, জ্ঞান অর্জনে রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যম তিনি নিজেই বাতলিয়ে দিয়েছেন।

মানুষ যাতে ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার সঠিক প্রবেশ পথ খুঁজে পায় সে উদ্দেশ্যে তিনি ঘোষণা
করেন-
انا مدینة العلم و علی بابها

“আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা”।

শহর যেমন সকল প্রয়োজনীয় বস্তুর নির্ভরযোগ্য প্রাপ্তিস্থান ঠিক সেরুপ রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আল্লাহর সকল জ্ঞানের উৎস প্রকার আর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুর মাধ্যমে সে উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে।

এছাড়া উপরোক্ত হাদীস আরো একটি বিষয় ইঙ্গিত দেয় তাহলো জ্ঞান দু’ প্রকার।

১। ইলমে জাহের বা বাহ্যিক জ্ঞান।
২। ইলমে বাতেন বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান।

ইলমে জাহের বা বাহ্যিক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলো-

(ক)
১. ইলমে শরীয়ত ও ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান।
২. ইসলামের যাবতীয় হুকুম আহকাম সম্পর্কীত জ্ঞান।
৩. ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা রাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কীত জ্ঞান।
৪. ইসলামের বিজ্ঞান সম্মত দিক।
৫. কুরআন, হাদীস, ফিকাহ সম্পৰ্কীয় দিক।
৬. ইসলামের ইতিহাস।
৭. ইলমে আৰ্কায়েদ।
৮. ভ্রান্ত মতবাদীদের ইতিহাস।
৯. নবীসাহাবা ও অলী- আল্লাহদের জীবনী ইত্যাদি।

(খ) একাডেমীক সিলেবাস ভুক্ত লেখা পড়া।
(গ) আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে।
(ঘ) আধুনিক বিশ্ব রাজনীতি ও পরিস্থিতি।
(ঙ) দেশীয় রাজনীতি ও সরকার সম্পর্কে।
(চ) অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ।
(ছ) বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থান ও পরিস্থিতি।
(জ) সাংগঠনিক জ্ঞানার্জন।

আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয় ইলমে তাছাউফ বা ছুফী তত্ত্ব। সুফীবাদের মূল কথা হলো আত্মশুদ্ধি। আর একজন সাধারণ মানুষও সুফীবাদী দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আত্মা শুদ্ধ করে একজন ইনসানে কামেল এ উন্নীত হতে পারেন। অর্থাৎ জ্ঞানের এ অন্যতম প্রধান শাখাই মানুষকে আল্লাহ পাওয়ার উপযুক্ত করে তোলে।

সুফীবাদী আত্মশুদ্ধির অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলো

*আমিত্ব পরিহার করার অনুশীলন।
*হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত হওয়ার অনুশীলন।
*মোহ-কামনা পরিহারের মাধ্যমে নিফসে আম্মারার বিরুদ্ধে জিহাদের অনুশীলন।
*অল্প তুষ্ট হওয়ার অনুশীলন।

মূলত উপরোক্ত বিষয়গুলো নফছে আমারার বিরুদ্ধে জিহাদ এবং আল্লাহ ও রাসুলাল্লাহ সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি ভিন্ন অন্য কোন কামনা পরিহার এর অন্তর্ভুক্ত।

*সুফী দর্শনের অনুসারী পীর, আউলিয়া,সুফী দরবেশদের জীবন দর্শন ।
* মারফতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির জ্ঞান।
ইলমে পীর-মুর্শিদের মাধ্যমে তরিকতে দাখিল হওয়া ইত্যাদি।

শিক্ষা সংস্কারের কর্মসূচী

সদা উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল কথাগুলো এভাবে
নির্দেশ করতে পারি

* আধুনিক জান-বিজ্ঞানের সাথে ইসলামী আদর্শের সমন্বয়ে উৎপাদন মুখী প্রগতিশীল
শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
* আমাদের ইসলামী আদর্শের রূপরেখা হলো ইসলামের মূলধারা সুন্নী মতাদর্শ।
* ইলমে শরীআর সাথে ইলমে তাসাউফের সমন্বয় সাধন।
ইসলাম বিকৃতকারী প্ৰবন্ধ সমূহ পাঠ্য তালিকা থেকে বাতিলের দাবী।

উপরোক্ত মৌলিক দাবী ও তদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার নিমিত্ত
নিম্নলিখিত কর্মসূচীগুলো পালন করতে হবে।

* সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক আমাদের কাঙ্গিক্ষত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রনীত রূপরেখার প্রকাশন ও
প্রচার।

* সভাসমিতি ও সেমিনারের মাধ্যমে উক্ত দাবীর প্রতি জনমত সৃষ্টির প্রয়াস ।

* এ সুনির্দিষ্ট প্রচারের ব্যবস্থা হিসেবে পোষ্টারিং, হ্যান্ডবিল প্রচার ও দেয়াল সংক্রান্ত লিখনের ব্যবস্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এ সংক্রান্ত মিছিল-মিটিং, সভা সমাবেশের আয়োজন করা ।

* বিভিন্ন সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান সহ প্ৰয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক কর্মসূচী
গ্রহণ।

(★) ছাত্ৰসমস্যার সমাধান

ছাত্রসমস্যাকে তিন শ্রেনীতে ভাগ করা যায়
১. প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক।
২. অঞ্চল ভিত্তিক।
৩. জাতীয় পর্যায়ে।

প্রতিষ্ঠানিক ছাত্রসমস্যাকে আবার দু’ভাগে ভাগ করতে পারি

* ব্যক্তিগত ও সামাজিক ।
* সমমনা বা অন্য যে কোন ছাত্রের কোন প্রতিষ্ঠানের ভৰ্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাদির সহযোগিতা।
* বিনাবেতনে অধ্যয়নের সুযোগ লাভে একজন সমমনা বা অন্য কোন গরীব ছাত্রকে সহযোগিতা করা।
* গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর জন্য শুভাকাঙক্ষী মহলের সাহায্য সহযোগিতা ব্যবস্থা।
* লজিং টিউশনীর ব্যবস্থা করা।
* নোট বা প্রয়োজনীয় বই, প্রশ্ন পত্র, গাইড সংগ্রহে সহযোগিতা প্রদান।
* রোগব্যাধি ও অন্য যে কোন প্রতিকূল অবস্থায় পাশে থেকে সহযোগিতা দেয়া ইত্যাদি। প্রাতিষ্ঠানিক সমষ্টিগত সমস্যা যে সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা মাদ্রাসায় আমাদের তৎপরতা চলবে বা চলছে সে সকল প্রতিষ্ঠানের কিছু সার্বজনীন সমস্যা থাকতে পারে। যেমন

*প্রাতিষ্ঠানিক পাঠাগারের অভাব।
* মসজিদ বা ইবাদতখানা ও অজখানার সমস্যা।
* প্রশ্ৰাব খানা, বাথরুম/পানীয় জলের সুব্যবস্থার অভাব।
* খেলার মাঠ ও ক্রীড়া-সরঞ্জামের অপ্রতুল ব্যবস্থা।
* ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা।
* ক্লাস রুমের অভাব, শিক্ষকের অভাব।
* প্রশাসনে দুর্নীতি
* ছাত্রবেতন কমানোসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী করণের দাবী (যদি বেসরকারী হয়) ইত্যাদি।

উপরোক্ত সমস্যাদি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত মিছিল মিটিং
এর আয়োজন করতে হবে। দাবী জানিয়ে পোষ্টারিং, দেয়াল লিখন ও প্রতিষ্ঠানের
কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে দাবী আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য এ সব ক্ষেত্রে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপক উৎসাহ ও সাড়া পাওয়া যাবে এবং তাদেরকে সাথে নিয়েই আন্দোলন করতে হবে। যাতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের সার্বজনীন কর্মসূচীর প্রভাবে আমাদের সংগঠনের প্রতি প্রভাবিত হয়।

(★) অঞ্চল ভিত্তিক ছাত্র সমস্যা

আমাদের কোন একটি অঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছাত্র থাকবে। তাদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই আমাদের আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত করতে হবে। তাই অঞ্চল ভিত্তিক তৎপরতা চালালে একই জনপদের নিম্ন উচ্চতম শ্রেনী পর্যন্ত সকল স্তরের ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে অগ্রসর হওয়া যাবে। এমনকি বর্তমানে এলাকার
সর্বসাধারণের কাছে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপারে সহযোগিতা দিয়ে গ্রহণযোগ্য।
হতে হবে। তাছাড়া এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধানের প্রয়াস চালানো।
উল্লেখ্য, আমাদের সামর্থে ছাত্রসমস্যার সফল সমাধান করতে না পারলেও সমাধানের জন্য যে আন্তরিকতা তা সর্বসাধারণের কাছে তুলে ধরতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য সহযোগিতা দিয়ে যেতে হবে।

(★) জাতীয় পর্যায়ে ছাত্র সমস্যার সমাধান সংক্রান্তঃ

সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন সময় ছাত্রসমস্যা দেখা দেয়। ছাত্রদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারী সিদ্ধান্ত বিরোধী আন্দোলন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সে সকল ক্ষেত্রে আমাদের সংগঠনকে
সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। উল্লেখ্য, যে সংগঠন জাতীয় সমস্যার ব্যাপারে সর্বাগ্রে সোচ্চার হয়ে এগিয়ে আসে সে সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা অল্প সময়ে বৃদ্ধি পেতে পারে।

যেসকল সমস্যা জাতীয় পর্যায়ে সর্বাগ্রে দৃষ্ট হয় সেগুলো হচ্ছে-

* সরকারীভাবে ছাত্রবেতন বৃদ্ধি।
* শিক্ষা বাজেট সংকোচন।
* শিক্ষা সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি।
* বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
* মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে ।
* ইসলামী ষড়যন্ত্র শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ইত্যাদি।

সর্বোপরি আমাদের রূপরেখা অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবীসহ উপরোক্ত যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলন, মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ প্রদর্শন, স্মারকলিপি প্রদান ইত্যাদির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(★) সর্বস্তরে ছাত্র সমস্যা দূরীকরণে গৃহীত ব্যবস্থাঃ

ছাত্রদের লেখা-পড়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে তাদের আস্থাভাজন হতে হলে আমাদের আরো কিছু কর্মসূচী হাতে নিতে হবে। সেগুলো হলো-

* বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গাইড, সাজেশান্স, প্রশ্নপত্রসহ প্ৰয়োজনীয়
তথ্যাদির সংগ্রহ করণ ও সরবরাহের ব্যবস্থা।
* মাদ্রাসা ও অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ক্লাসের জন্য সিলেবাস ভিত্তিক নোট সংগ্রহ করে সরবরাহ করণের ব্যবস্থা।
* এস. এস. সি, দাখিল, এইচএসসি, আলিম, ফাজিল, কামিল, ডিগ্রী, মাস্টার্স পরীক্ষার
সাথে সংশ্লিষ্ট নোট, প্রশ্নপত্র, সাজেশান, গাইড সংগ্রহ ও সুলভ মূল্যে বা বিনা মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা।
* সিলেবাস ভিত্তিক পুরানো বই ও REFERENCE BOOK ঋণ হিসেবে সরবরাহের ব্যবস্থা।

(★) ঋণ পাঠাগার বা LENDING LIBRARY স্থাপনঃ

LENDING LIBRARY হলো বাংলাদেশে বর্তমান ছাত্রদের পাঠ সংক্রান্ত তথ্য সহযোগিতা প্রদানের অন্যতম মাধ্যম। এ পাঠাগার সংগঠনের প্রতিটি শাখা অফিসেই প্রতিষ্ঠা করা যাবে। এ পাঠাগারের কাজ হবে ছাত্রদের নতুন পুরাতন সিলেবাসের বই, নোট, সাজেশান, গাইডসহ প্ৰয়োজনীয় শিক্ষা সরঞ্জামাদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণসরূপ প্রদান করে লেখা-পড়ায় সহযোগিতা করা। এর ফলে যে কোন এলাকার বা প্রতিষ্ঠানের সর্বশ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রী উপকৃত হবে এবং আমাদের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষায় ছাত্ররা বাধ্য হবে।

(★) কিভাবে একটি লাইব্রেরী গড়ে তোলা যাবেঃ

অতি সহজ উপায়ে এ কাজ হাতে নেয়া যেতে পারে-

* দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল, এস.এস.সি, এইচ,এসসি, ডিগ্ৰী বা অনার্স মাস্টার পরীক্ষার্থী কর্মীদের পরীক্ষা শেষে তাদের যাবতীয় পুরাতন বই কিতাবসহ নোট, গাইড, প্রশ্নপত্র, সাজেশানসমূহ এ পাঠাগারকে বিনা মূল্যে বা স্বল্প মূল্যে প্রদান করবে।

* অন্যান্য সব ক্লাশের ছাত্র-ছাত্রীরাও পরবর্তী ক্লাসে অনুরূপ প্রমোশনের পর নিম্নো ক্লাসের উপরোক্ত সরঞ্জামাদি প্রদান করবে।
* শুভাকাঙক্ষীদের কাছ থেকে এ ধরণের একটি শুভ পদক্ষেপের কথা বলে আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করে আমরা উপরোক্ত উপায়ে একটি ‘ লিডিং লাইব্রেরী’ প্রতিষ্ঠা করে সমমনা ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী
মহলে আমাদের ব্যাপারে যে আস্থা সৃষ্টি হবে এবং নোট বই সংগ্রহের জন্য সাধারণ ছাত্ররা আমাদের সাথে যেভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলবে তা আমাদের সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দারুন ভাবে সহায়ক হবে।

(★) কর্মসূচীর প্রকারভেদ ও বাস্তবায়ন পদ্ধতিঃ

আমাদের সাংগঠনিক কর্মসূচী বা কার্যক্রমগুলোকে শ্রেনী অনুযায়ী
আমরা বিভিন্ন ভাগ করতে পারি। আমাদের সংগঠনের পাঁচ দফা স্থায়ী কর্মসূচী এবং এর বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রম সমূহ যেমন রয়েছে, তেমনি আছে কেন্দ্ৰীয় পৰ্যদ বা উর্ধ্বতন কমিটি কর্তৃক ঘোষিত জরুরী / বিশেষ বা সাধারণ কর্মসূচীসমূহ। এছাড়াও কিছু নিয়মিত কার্যক্রম আমাদের সাংগঠনিক কামিটি গুলোকে চালিয়ে যেতে হবে যা কিনা উদ্বর্তন পরিষদ কর্তৃক নির্দেশনার দরকার নেই। সংগঠনের গতিশীলতার জন্য বা সক্রিয়তার
জন্য যে কর্মসূচীসমূহ অবশ্যই পালনীয়।

সুতরাং আমাদের কর্মসূচীসমূহ হলো তিন প্রকারঃ

(১) পাঁচ দফা স্থায়ী কর্মসূচীর বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ,
(২) উর্ধতন পর্ষদ ঘোষিত কর্মসূচী পালনের পদক্ষেপ গ্রহণ,
(৩) প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটি কর্তৃক পালনীয় কতিপয় নিয়মিত কার্যক্রমের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ।

নিম্নে উপরোক্ত কর্মসূচীর ব্যাপারে আলোচনা করছি-

(★) পাঁচ দফা স্থায়ী কর্মসূচী

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার অভীষ্ট লক্ষ্য উদেশ্য অর্জনের নিমিত্ত সংবিধানে পাঁচ দফা কর্মসূচী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মানব জীবনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান আদর্শ বাস্তবায়ন এবং আল্লাহ -রাসুলের সন্তটি অর্জনে এ পাঁচ দফা কর্মসূচী অত্যন্ত বাস্তব, বিজ্ঞান ভিত্তিক তথা গতিশীল ভূমিকা পালনের দাবীদার। আর বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটির দায়িত্বশীলদের প্রধান কর্তব্য হলো এ পাঁচ দফা কর্মসূচী সামনে রেখে প্রতিনিয়ত এগুলো বাস্তবায়নে সচেষ্ট হওয়া। সুতরাং প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটির স্থায়ী কাজ হলো কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়নের যে রুপরেখা এ পুস্তিকার কর্মসূচীর ব্যাখা ও বাস্তবায়ন’ সংক্রান্ত পর্বে উল্লেখ হয়েছে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা। বিশেষতঃ প্রথম কর্মসূচীর, ছাত্রসমাজের মধ্যে যথার্থ ইসলামী মূল্যবোধ সৃষ্টি, সুন্নী দর্শনে অনুপ্রাণিত করণ এবং সুসংগঠিত করণের মতো পবিত্র দায়িত্ব, দাওয়াত প্রতিটি কর্মীনেতাকেই শুধু নয়, একজন প্রকৃত ঈমানদার মুসলমানেরও আমৃত্যু চালিয়ে যেতে হবে। প্রথম কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজ (দাওয়াত) সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে গেলেই দেখা যাবে একটি সাংগঠনিক কমিটির -নেতা-কর্মীরা সারা বছরই এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়বে যেনো তারা অন্য কোন কাজের সময় পর্যন্ত পাননা। অর্থাৎ এটা এমন একটা গতিশীল কর্মসূচী যে, উর্ধ্বতন পর্ষদ কর্তৃক ঘোষিত অন্য কোন কর্মসূচী না থাকলেও একটি শাখা শুধু দাওয়াতি কাজ চালিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি ধরে রাখতে পারেন। কর্মীদের সার্বক্ষণিক কর্ম ব্যস্ততায় রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি ধরে রাখতে পারেন। আর এজন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন- পরিষদকে তাদের অধস্তন কমিটিগুলো (এ পুস্তিকায় উল্লেখিত পদ্ধতিতে প্রথম কর্মসূচীর সমর্থক সংগ্রহ ও কর্মী গঠনের) এ প্রধান দায়িত্বটি ঠিকমতো পালন করছে কিনা তা নিয়মিত তদারক করতে হবে।

এছাড়াও দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম কর্মসূচীর বাস্তবায়নের যে রূপরেখা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলেও একটা সাংগঠনিক কমিটিকে সারা বৎসর কর্মব্যস্ত থাকতে হবে। উর্ধ্বতন পর্ষদের নির্দেশিত কর্মসূচীর দিকে চেয়ে থেকে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন হবে না এবং স্থবিরতার দানা বাঁধার আশংকাও থাকবে না।