কর্মসূচীর ব্যাখা – তৃতীয় দফা কর্মসূচী

কর্মসূচীর ব্যাখা – তৃতীয় দফা কর্মসূচী

“জ্ঞানের প্রসার কল্পে বিভিন্ন প্রকাশনা, পাঠাগার স্থাপন ও সমাজসেবা মূলক কার্যের
বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।”

তৃতীয় দফা কর্মসূচী তিনটি উপায়ে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে-

(ক) প্রকাশনা
(খ) পাঠাগার স্থাপন
(গ) সমাজ সেবা।

(ক) প্রকাশনা

এটি ৩নং কর্মসূচীর প্রথম এবং প্রধান অংশ। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের কেন্দ্র হতে থানা পর্যায়ে পর্যন্ত প্রকাশনার দায়িত্বে গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক’ নামক একটি পদ রয়েছে। গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সংগঠনের ৩নং কর্মসূচীর প্রকাশনা অংশের। বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা দেবেন এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। সংগঠনের উদ্দেশ্য-লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাপক প্রকাশনার গুরুদায়িত্ব তার উপর অর্পিত। দেশে বর্তমানে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক প্রকাশনা ভ্রান্ত মতবাদীদের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। আর এ শূণ্যতা পূরণের দাবীতে গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদককে নিরলস পরিশ্রম করতে হবে। সমসাময়িক ভ্রান্ত প্রকাশনার দাতভাঙ্গা জবাব সহ নিয়মিত পত্র-পত্রিকা, স্মরণিকা, আদর্শ ও সিলেবাস ভিত্তিক বই-পুস্তক, পোস্টার, প্রচার পত্র ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে থানা ও জেলা গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদকগণ সম্পাদকের সাথে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও অনুমোদন নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন। যাতে অগোছালো অনাকাঙ্ক্ষিত কোন প্রকাশনা জনগণের হাতে না যায়।

(খ) পাঠাগার স্থাপন

সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক বই পুস্তক সংরক্ষণ ও পাঠক-পাঠিকার জন্য পাঠাগার স্থাপনের কর্মসূচী রয়েছে এ সংগঠনের। সংগঠনের নিজস্ব কৰ্মী, সমমনা সুন্নী মুসলমান ও সাধারণ জনগণের পাঠাগার ব্যবহারকে ভিত্তি করে আমরা পাঠাগারকে নিম্নোক্ত তিন শ্রেনীতে ভাগ করতে পারি। যেমন-

• সাংগঠনিক পাঠাগার,
• সুন্নী পাঠাগার,
• গণ পাঠাগার।

(★) সাংগঠনিক পাঠাগার

সংগঠনের প্রতিটি শাখায় একটি নিজস্ব পাঠাগার থাকবে। সংগঠনের নিজস্ব প্রকাশনা সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বই-পুস্তক ও প্রকাশনা এখানে সংরক্ষিত হবে। মূলতঃ সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট শাখার দপ্তর সম্পাদক বা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সম্পাদক এ পাঠাগারে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবেন।

(★) সুন্নী পাঠাগার

এ ধরণের পাঠাগার সমমনা সুন্নী বা আমাদের শুভাকাঙক্ষী মহলের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে। সর্বস্তরের সুন্নী মুসলমানদের এ পাঠাগার ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। এ ধরণের পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিক উদ্যোগ গৃহীত হবে সংগঠনের সাহিত্য সাংস্কৃতিক সম্পাদক বা সংগঠনের মাধ্যমে। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুসারে সমমনা বা শুভাকাঙক্ষীদের এ ধরণের একটি আকিদা ভিত্তিক পাঠাগার গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।

তারা এ ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হলে পরবর্তীতে এ উদ্যোগ বাস্তবে পরিণত করতে হবে। তারা এ ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হলে পরবর্তীতে এ উদ্যোগ বাস্তবে পরিণত হবে। শুভাকাঙখী ও আমাদের কর্মী দায়িত্বশীলদের নিয়ে পাঠাগারের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের চেষ্টা করতে হবে। যাতে এ পাঠাগারটি পরবর্তীতে আমাদের সংগঠনের পক্ষে ব্যবহৃত হতে পারে।

(★) গণ পাঠাগার

এটা সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য এবং সর্বসাধারণের উদ্যোগেই স্থাপিত হবে। তবে প্রাথমিক উদ্যোগ গৃহীত হবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে। অবশ্য প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। জনগণকে বুঝাতে হবে যে এটা দল নিরপেক্ষ সাধারণ উদ্যোগ, এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নের অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমনভাবে এগুতে হবে যাতে সর্বসাধারণের স্বতঃস্কৃত সাড়া পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এ উদ্যোগ সফল হলে আমাদেরও একটি উদ্দেশ্য সফল হবে, সেটি হলো আমাদের যে সমস্ত দায়িত্বশীল ও শুভাকাঙক্ষী প্রথম এ উদ্যোগ নিয়েছেন পরিচালনা কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্তি সহজতর হবে। একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই হয়তো আমাদের আদর্শের লোকজনই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। ফলে সর্বসাধারণের এ পাঠাগার ও আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে। আমাদের আদর্শ ভিত্তিক প্রকাশনা গুলো সহজে পোঁছে যাবে এবং সর্বসাধারণের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাপক আয়োজন সহজেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে। এর মাধ্যমে আমরা অনুকূল উপায়ে সহজ পন্থায় সর্বসাধারণের কাছে আদর্শের (সংগঠনের)দাওয়াত নিয়ে যেতে পারবো।

পাঠাগার গড়ে তোলার পদ্ধতি উপরোক্ত তিন প্রকারের পাঠাগার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রায় একই প্রকারের পদ্ধতি অনুসরণ করা চলবে। অবশ্য কোন কোন অবস্থা ভেদে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সাধারণভাবে আমরা নিম্নোক্ত উপায়ে পাঠাগার গড়ে তুলতে পারি।

(*) সর্বসাধারণের অনুদানের মাধ্যমে।
(*) সমমনাদের অনুদানের মাধ্যমে ।
(*) সমমনাদের বই-পুস্তক ও অন্যান্য প্রকাশনা অনুদান নিয়ে।
(*) পুরানো বই সংগ্রহ করে।
(*) সরকারী কতৃপক্ষের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে।
(*) বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বই বা নগদ টাকা অনুদান নিয়ে।
(*) বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থাপ্রকাশক ও লেখকের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বই সৌজন্য কপি সংগ্রহ করে।

(গ) সমাজসেবা

সমাজসেবামূলক কাজের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা ৩নং কর্মসূচীর অন্যতম দাবী। সেবা আমাদের সংগঠনের সপ্তম মূলনীতি। মূলনীতির সাথে সম্পৃক্ত ৩নং কর্মসূচীর এ অংশ তাই গুরুত্বপূর্ণ। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে একজন সমাজকল্যাণ সম্পাদক।

উল্লেখ্য, ইসলাম হলো মানবতার ধর্ম। হক্কুল্লাহ তথা আল্লাহর হকের সাথে হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং সমাজ সেবার মাধ্যমেই সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এ উপায়েই সমাজের মানুষের খুব কাছাকাছি আসা যায়। সমাজের প্রিয় ব্যক্তিদের আহবানই সমাজের মানুষ বেশী গ্রহণ করে। এজন্য যারা সমাজ সেবক তারাই সে সমাজে সবচেয়ে বেশী প্রভাবশালী এবং তারাই কোন আদর্শের প্রচারে বেশী কৃতিত্বের দাবীদার। ক্ষমতা, নেতৃত্ব ছাড়া আদর্শ আশানুরূপ প্রতিষ্ঠিত হয়না। আর সমাজ সেবার মাধ্যমেই সমাজের কাজ বা মানবকল্যাণমূলক কর্মসূচীতে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কর্মীদের একজন সফল সমাজ কর্মী হিসেবেও গড়ে উঠতে হবে। যাতে পরবর্তীতে যে কোন পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচনে সেনা কর্মীরা জনগণের আস্থাশীল হতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব এলাকায় রয়েছে নানা সমস্যা। সে সকল সমস্যা সমাধানে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। যেমন, আমাদের এলাকায় একটি স্কুল বা কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবী দীর্ঘদিনের। আর এ দাবীর বাস্তবায়নের প্রাথমিক উদ্যোগ যদি আমাদের পক্ষ থেকে নেয়া হয়, যদি সর্বসাধারণ এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয় তবে এ উদ্যোগ একদিন সফল হবে, আর এ সফলতার কৃতিত্ব আসবে প্রাথমিক উদ্যোক্তাদের। আর এ সুবাদে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির মধ্যে আমরা হব অন্তর্ভুক্ত। সমাজের কাছে বিশ্বস্ত সেবক হিসেবে পরিণত হবো। সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করে ইসলামেরও একটি মহান দায়িত্ব পালন করলাম। আবার পরবর্তী কোন নেতৃত্ব নির্বাচনে জনগণ আমাদেরই প্রথম আহবান জানাবে। আর এভাবে একদিন সমাজ, জাতি বা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণও সুন্নী মতাদর্শীদের হাতে চলে আসাটাই স্বাভাবিক।